পথ দেখাচ্ছেন কেরলের এই ব্যবসায়ী ,এখন ঘরে বসেই মাস গেলে আয় করছেন লাখ লাখ টাকা

Business Idea: আজকাল অনেক লোক ভালো চাকরি ছেড়ে কৃষিতে তাদের ভবিষ্যৎ গড়ার চেষ্টা করছেন এবং তাতে সফলও হচ্ছেন, তবে কখনো কখনো কৃষির মাধ্যমে ভালো অর্থ উপার্জন করা কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে, মাশরুম চাষ একটি ভালো বিকল্প। গত কয়েক বছরে অনেক কৃষক মাশরুম (Mushroom Farming) চাষে ঝুঁকেছেন, যা কম খরচে বেশি লাভ দেয়। মাশরুম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য নানাভাবে উপকারী, যার কারণে বাজারে এর চাহিদা অনেক বেশি। তাই এটি চাষ করে প্রচুর অর্থ আয় করা সম্ভব। কেরালার একটি প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা শানুব ভজক্কড মাশরুম চাষ করে লক্ষাধিক টাকা লাভ করছেন, আসুন জেনে নেওয়া যাক সম্পূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে।

Mushroom Farming

কেরালার বাসিন্দা শানুব ভজক্কডের যখন ২২ বছর বয়স, তখন তিনি একদিন জানতে পারেন তাঁর এক প্রতিবেশী ক্যানসারে মারা গেছেন। আসলে চিকিৎসকরা তাঁকে যা যা খাওয়াদাওয়া করতে বলেছিলেন, তা তিনি করতে পারেননি ঠিকমতো, কারণ গ্রামের বাজারে সেই সকল জিনিস পাওয়া যায় না এবং তার দামও অনেক। সেই খাবারের তালিকায় ছিল মাশরুম (Mushroom)। শানুব খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন এই মাশরুম বহু রোগ থেকে মুক্তি দেয়। এর চাষও খুব সহজ, কিন্তু তেমন পরিচিতি না থাকার কারণে সকলে হাতের কাছে এই খাবারটি পান না। এরপর তিনি সেই বছরই নিজের বাড়িতে মাশরুম চাষ শুরু করেন। সেই চাষবাসই আজ তাঁকে সফলতা এনে দিয়েছে।

আরো পড়ুন: দেশের GDP তে ঝড় তুললো ভারত, গড়ল নতুন রেকর্ড

বছর পাঁচেকের মধ্যে তাঁর কাজের খবর ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। তাঁর মাশরুম চাষের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। আজ তিনি এমন এক ব্র্যান্ড গড়ে তুলছেন, যা শুধু মাশরুম চাষ করে বিক্রিই করে না, বরং মাশরুমের বিভিন্ন পদ যেমন স্যুপ, আচার প্রভৃতি পণ্য বিক্রি করে। শানুব বলেন যে, তিনি এখন প্রতিদিন গড়ে ৮০ মাশরুমের (Mushroom Farming) প্যাকেট বিক্রি করেন। চারিদিকে তাঁর মাশরুমের প্রশংসাও ছড়িয়ে পড়েছে। শানুব আরো বলেন, সকলেই নিজের বাড়িতে অল্প পরিমাণে এই মাশরুম চাষ করতে পারেন। এর জন্য তেমন সময়, শ্রম ও অর্থ লাগে না, উপরন্তু এর উপকারিতা অনেক। যেকোনো একটি বদ্ধ ঘরের ভিতরে ছোট জায়গায় দু থেকে তিনটি মাশরুমের বেড করা যেতে পারে, যা সপ্তাহে দুই বার ফসল দিতে পারে। এক একটা বেড করতে ৭০ টাকা মতো খরচ হয়।

বীজ প্রতিস্থাপনের পর ২০ দিন মতো সময় লাগে। তেমন যত্ন করতে হয় না। জুন থেকে ডিসেম্বর মাসের স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া মাশরুম জন্মানোর জন্য সঠিক সময় হলেও, ঘরের ভিতরে সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে পারলে সারা বছর ধরেই মাশরুম জন্মায়। এই ধরনের মাশরুম (Mushroom) চাষ করার জন্য প্রধানত তিনটি উপকরণ দরকার, যেমন মাশরুমের বীজ, খড় ও পলিথিনের ব্যাগ। প্রথমে আধ থেকে এক ইঞ্চি মাপের খড় কেটে জীবাণুমুক্ত করার জন্য ফুটন্ত গরম জলে প্রায় ২০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। ব্লিচিং পাউডার ও চুন মেশানো পরিষ্কার জলে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখা যেতে পারে। এরপরে ফোটানো বা ভেজানোর জল এমনভাবে ঝরিয়ে নিতে হবে, যাতে হাত দিয়ে খড় চাপলে জল পড়বে না, অথচ হাতে একটা ভেজা ভাব থাকবে।

Mushroom Farming

এরপর একটি পলিথিন ব্যাগের মধ্যে দুই ইঞ্চি পুরু করে খড় বিছিয়ে তার উপর থেকে ব্যাগের ধার ঘেঁষে মাশরুমের (Mushroom) বীজ ছড়িয়ে দিতে হবে। সেই বীজের উপরে আবার খড় ও খড়ের উপর আবার বীজ, এইভাবে প্রায় সাত থেকে আটটা স্তর তৈরি করে পলিথিন ব্যাগের মুখ দড়ি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। খড় বিছানোর সময় প্রতিবারই হাত দিয়ে ভাল করে চেপে দিতে হবে, যাতে খড়ের ভিতর হাওয়া জমে না থাকে। এরপর সেই প্যাকেটগুলিতে ছোট ছোট ফুটো করে তুলো দিয়ে সেই ফুটোর মুখ আবার বন্ধ করে দিতে হবে, যাতে স্বাভাবিক হাওয়া চলাচল বজায় থাকবে, আবার ধুলোও ঢুকতে না পারে।

আরো পড়ুন: কালের বিস্ময় বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য তাজমহল ছিল না এর আসল নাম? ভারতের ৯৯ শতাংশ জানেন না তাজমহলের পূর্ব নাম

প্যাকেটটি সাত থেকে দশ দিনের জন্য কোনো স্যাঁতস্যাঁতে এবং অন্ধকার জায়গায় রেখে দিতে হবে, তবে অন্ধকার হলেও জায়গাটিতে যেন হাওয়া চলাচল করে এবং জায়গাটি যাতে পরিষ্কার ও পোকা মাকড়মুক্ত থাকে, সেই বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। এর চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ওই প্যাকেটগুলিতে ছড়ানো বীজের জায়গায় সাদা আস্তরণ দেখা দেবে। একে মাইসেলিয়াম বলে। বাতাসের আর্দ্রতা বুঝে প্রয়োজন মতো প্যাকেটের উপরে মাঝেমাঝে জল স্প্রে করতে হবে, যাতে ভেজা ও স্যাঁতস্যাঁতে ভাব থাকে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই প্যাকেটের গায়ের সেই ফুটোগুলি দিয়ে মাশরুম (Mushroom Farming) দেখা যাবে। সাধারণত ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই মাশরুম খাওয়া যায়। এক একটি ব্যাগ থেকে তিনবার ফলন পাওয়া যায়। এই ভাবে চাষ করলে আপনিও অল্প সময়ে স্বল্প খরচে লাভবান হতে পারবেন।